পবিত্র শবে বরাত ২০২৪ নামাজ, রোজা, নফল ইবাদত দোয়া ফজিলত ও খাবার সম্বন্ধে জেনে নিন

রমজান মাস আগমনের পূর্বে মাসে একটি রাত হচ্ছ পবিত্র শবে বরাতের রাত বা ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের ১৪ তারিখের মধ্যরাত, ফার্সি ভাষায় বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য, বন্টন, নিযুক্ত করা। লাইলাতুন নিফসি মিন শা’বান; লাইলাতুল দোয়া। পবিত্র শবে বরাতের হলো ইসলামিক বাণীতে একটি স্পেশাল রাত, যা প্রত্যেক শাবান মাসের পূর্ণিমা হওয়ার আগের ১৫ম রাত। বিশেষভাবে বরকত পূর্ণ এই রাতে মুসলিম ভাই-বোনরা ইবাদত করে। ইবাদতের মাধ্যমে তারা আল্লাহর কাছে মাগফিরত, রহমত এবং বরকত অনুভব করার কামনা করে।

পবিত্র শবে বরাত কেনো পালন করা হয় জানুন

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ২০ রাকাত নামাজ পড়বে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। (তিরমিযী, মিশকাত, ফয়জুল কালাম, হাদীসঃ ৪৪৯-৪৫০)

সালাতুত তাসবীহ- নামাজ ও দোয়া বাংলা অর্থ সহ পড়ার সহজ নিয়ম জেনে নিন

আমাদের সর্বশক্তিমান আল্লাহ শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উম্মতকে ইবাদতের কিছু বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইবাদতের এই বিশেষ পাঁচটি রাত হল

  • শবে জুমা বা জুমার রাত
  • শবে ঈদাইন বা দুই ঈদের রাত
  • শবে বরাত বা মুক্তির রাত তথা ‘নিসফ শাবান’
  • শবে কদর বা কদরের রাত

পবিত্র শবে বরাত কোন দোয়া বেশি বেশি করে পালন করবেন জেনে নিন

শবে বরাতে রাত্র কিভাবে পালন করবেন

শবে বরাতের ইবাদতের মধ্যে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ, সালাতুল তাসবীহ, দরুদ শরীফ, নফল নামাজ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, মানুষ অধিক পড়া কোন সূরা বা দোয়া পড়তে পারেন যেমন সূরা ইয়াসীন, সূরা আর-রহমান, দুআ কুনূত, দুআ মাসুরা, দুআ কুমাইল, দুআ নিয়াজ ইত্যাদি।

শবে বরাতে রাত্রী কিভাবে আসলো জেনে নিন

হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) বলেছেন যে, তিনি নবী (সা.) কে মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়তে দেখেছিলেন। এবং নবী (সা.) তাদের বলেছিলেন যে, যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ পড়বে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যতও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হোক। (ফয়জুল কালাম লি সায়্যদিল আনাম, মুফতি আজম ফয়জুল্লাহ রহ., পৃষ্ঠা: ৩২১)।

শবে বরাতের ইবাদতে রোজা রাখা ও চারিত্রিক ইবাদতের মাধ্যমে বরকত অর্জন করা হয়। সহীহ হাদিসে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে, এ রাতে আল্লাহর অগ্রাধিকার কামনা করে সমস্ত ইবাদত করা যাবে। শবে বরাতের ইবাদতে অংশ নিতে আগ্রহী হলে, আল্লাহর কাছে ভাল অপেক্ষা পেতে সতর্ক হওয়া উচিত। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করা যায়।

শবে বরাতের নিয়ম ও ফজিলত

  1. নামাজ: শবে বরাতের নামাজ একটি নফল নামাজ। এটি দুই রাকা’ত নামাজ এবং গুরুতের সাথে পড়া হয়। এই নামাজে সূরা ইয়াসীন পড়া হলে সুন্নত হয়।
  2. রোজা নিয়ত: শবে বরাতের রোজার নিয়ত করার সময়ে একটি সহীহ দোয়া পড়া হয়। প্রায়শই নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে নিয়ত করা হয়: “নিয়ত করছি আজ শবে বরাতের রোজা রাখার জন্য আল্লাহর প্রতি কর্তব্যবোধ করে।” প্রতি শাবান মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখে নফল রোজা রয়েছে। যা আদিঃ পিতা হজরত আদম (আ.) পালন করতেন এবং আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পালন করতেন, যা মূলত সুন্নত।

হাদিসঃ “আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বরাতের রাতে এক মুহাদ্দিস আমির ইব্নে রাবি’ বর্ণিত করেছেন, তারা বলেন, যে ব্যক্তি বরাতের রাতে উপবাস করে, তার সালাত কবুল হয় এবং তার অবশেষের এক জুম্মার মধ্যের মধ্যে এবং পরবর্তী এক জুম্মার মধ্যের মধ্যে তার গুনাহ ক্ষমা করা হয়।” (সহীহ ইবনে খুজাইমাহ, হাদিস: ৭০৭)

  1. নফল ইবাদত: শবে বরাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নফল ইবাদত করা। এতে কুরআন তিলাওয়াত, সালাতুল তাসবীহ, দুআ, দরুদ শরীফ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  2. দোয়া: শবে বরাতের সময়ে বিশেষ দোয়া পড়া হয়, যেমন দুআ কুনূত, দুআ মাসুরা, দুআ কুমাইল, দুআ নিয়াজ ইত্যাদি।
  3. ফজিলত: শবে বরাতের রাত্রিতে ইবাদতের ক্ষেত্রে বরকত আছে বলে মানা হয়। ইসলামী গ্রন্থসমূহে এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার দয়া ও ক্ষমা ব্যবস্থা করেন। এটি মানুষের গুনাহ ক্ষমা করার জন্য একটি সুযোগ হিসাবে মন্য।

এই প্রকারে, শবে বরাতের নামাজ, রোজা নিয়ত, নফল ইবাদত, দোয়া এবং ফজিলত সম্পর্কে কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে মাগফিরত, রহমত এবং বরকত অনুভব করা যেতে পারে।

পবিত্র শবে বরাত রাতে খাবারের তালিকা

পবিত্র শবে বরাত রাতে খাবারের তালিকা সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা ও পদ্ধতি থাকতে পারে, সেগুলি সমাজের সাংস্কৃতিক প্রথা-প্রণালীর উপর নির্ভর করে। তবে, এই রাতের জন্য সাধারণত একটু ভালো খাবার আয়োজন হতে পারে, যা স্বাভাবিক খাবারের থেকে কিছুটা আলাদা।

সাধারণত পবিত্র শবে বরাত রাতে মিষ্টি খাবার ব্যবহৃত হয়, যেমন খুদা, ফিরনি, সেমাই ইত্যাদি। এর পাশাপাশি রুটি বা নান বিভিন্ন সবজি ও মাংসের সাথে পরিবেশন করা হতে পারে।